রামগঞ্জে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যুবলীগ নেতা বশির আহম্মেদ মানিক

আবু তাহের, রামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

দূর্ণীতি,অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পেয়ে ও ইউপি সদস্যদের অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারনকৃত এবং বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে একাধিক অস্ত্র,নারী নির্যাতন ও মাদক মামলার আসামী রামগঞ্জ উপজেলার পূর্বাঞ্চলের শীর্ষ সন্ত্রাসী ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের নেতা বশির আহম্মদ মানিক। এখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।

এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। তাকে গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে বৃহস্পতিবার (১০অক্টোম্বর) এলাকাবাসী পক্ষে দেহলা গ্রামের জহিরুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী জেলা পুলিশ সুপার ও রামগঞ্জ উপজেলা সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার বরাবর লিখিত আবেদন করেন।

এ ছাড়াও ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীকে মারধর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-লুটপাট ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে হামলায় ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় ও লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫টি মামলা ও অভিযোগ হয়েছে। বশির আহম্মদ মানিক উপজেলা ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের আথাকরা গ্রামের মৃত ফজল হকের বড় ছেলে।

লিখিত আবেদন, মামলা বিবরন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বশির আহম্মদ মানিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাজানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইট লেবার হিসেবে কাজ করতো। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতার আসার পর মানিক তার ভাই ছোট এলজি নাসির, পিস্তল মোহাম্মদ, মিল্লাতসহ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে।

তার নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছর যাবত দেহলা, আথাকরা, দেবনগর, লক্ষ্মীধর পাড়া, উদয়পুর, লামনগর, শাহারপাড়া, নাগমুদ গ্রামসহ উপজেলার পূর্বাঞ্চলে এই বাহিনী সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজি , মাদক ব্যবসা করতো। বশির আহম্মদ মানিক ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোয়ন নিয়ে ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। এর পর থেকে সে উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত, সালিশ বানিজ্যেসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। ২০২০ সালে পরিষদের ১০জন সদস্য তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্ণীতি, অর্থ আত্মসাত ও স্বজনপ্রীতির ২২ অভিযোগ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করে। অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় অনাস্থা প্রস্থাব গৃহীত হয় মর্মে, উপজেলা জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২০২১সালে ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার(ইউনিয়ন পরিষদ) আইন,২০০৯ এর ৩৫(২) ধারা মোতাবেক তার চেয়ারম্যান পদ থেকে শূন্য ঘোষনা করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে আথাকরা বাজার এলাকায় বালু গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে প্রকাশ্য গোলাগোলি ও গাড়ি ড্রাইভার কবির হোসেনকে গুলি বিদ্ধের ঘটনায় রামগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টা মামলা নং ২৮/২৩৫ তারিখ ২৮.১০.২০১৭ইং, সে ২০২০ সালে আলোচিত শারমিন ধর্ষন মামলার আসামীসহ ২০ থেকে ২৫ সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজি ও মাদক মামলা ও অভিযোগ রামগঞ্জ থানায় এবং লক্ষ্মীপুর আদালতে হয়েছে। এর অধিকাংশ মামলা ও অভিযোগ বাদীকে হুমকী ধমকী দিয়ে তুলে নেয়।

এ ছাড়াও সে দেহলা গ্রামের পচা মার্কেট এলাকায় জসিম উদ্দিনের ভবন দখল করে নারী ও মাদক ব্যবসাসহ মানুষকে ধরে দিয়ে আত্যাচার নির্যাতন ও চাঁদা আদায় করতো। ২০ আগস্ট জসিম উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক ভিডিও বার্তায় প্রকাশ করেন। বশির আহম্মদ মানিকের আয়ের উৎস হিসেবে কোন বৈধ ব্যবসা বা পেশা না থাকলেও সে অনিয়ম,দূর্ণীতি,ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও সালিশ বানিজ্য করে অল্প সময়ের মধ্যে শত কোটি মালিক। আথাকরা গ্রামে কোটি মূল্যের ডুপ্লেক বাড়ি, ঢাকায় কয়েকটি ফ্ল্যাট, প্লট ও দোকান রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিতি করেন। । চাঁদাবাজি মামলার বাদী রাকিব হোসেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ও লুটপাট মামলার বাদী সাইফুল ইসলাম, সাবেক মেম্বার মহসিন, ব্যবসায়ী আবুল বাশার, জসিম উদ্দিন, মানিক মিয়াসহ অনেকে বলেন, বশির আহম্মদ ও তার বাহিনী অত্যাচার ও নির্যাতন ছিল সীমাহীন, বিগত ১৫ বছরে হিন্দু,মুসলিম, নারী,পুরুষ, প্রবাসী ,ব্যবসায়ী, শিক্ষক, কৃষক,শ্রমিক, বিরোধী রাজনীতিক দলের কর্মীসমর্থকসহ শত শত মানুষ তার অত্যাচার-নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছে। তার অপকর্মের কথা বলতে মানুষ এখনো ভয় পায়। তাকে গ্রেফতার করে আইনে আওয়াতায় নেওয়ার দাবী করেন তারা। রামগঞ্জ উপজেলা সেনাবাহিনীর ক্যাম্প কমান্ডার বলেন, বশির আহম্মদ মানিকে বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আসছে, বর্তমানে সে পলাতক রয়েছে। অভিযোগ যাচাই বাচাই করে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওয়াতায় আনা হবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আকতার হোসেন বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান বশির আহম্মদ মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Related Posts

en_GB