শরীফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সিলেট সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা বিজিবির

শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

 

গত ১২ ডিসেম্বর অজ্ঞাত আততায়ী সন্ত্রাসীর গুলিতে গুরুতর আহত হন শরীফ ওসমান হাঁদী। বর্তমানে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার দ্রুত সুস্থতার জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দোয়া ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

 

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্তরা যেন কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চল দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর আশঙ্কা থাকায় এই অঞ্চলের সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।

 

বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট অঞ্চলের ৪৮, ১৯ ও ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত টহল, তল্লাশি ও গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়ানো হয়েছে জনবল এবং রাতদিন টহল জোরদার করা হয়েছে, যাতে কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে।

 

এ বিষয়ে ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নাজমুল হক জানিয়েছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি কোনো ধরনের ছাড় দিচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের ভেতরে সংঘটিত কোনো অপরাধের পর অপরাধীরা যেন সীমান্ত ব্যবহার করে পালাতে না পারে, সে বিষয়ে তারা সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সম্ভাব্য সব পালানোর পথ কঠোরভাবে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে এবং প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেই অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।

 

১৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জুবায়ের আনোয়ার পিএসসি বলেন, এই হামলা ব্যক্তি বিশেষের ওপর হলেও এর প্রভাব সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। তিনি জানান, বিজিবির প্রতিটি টহল দল সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে এবং সীমান্ত অতিক্রম করে অপরাধীদের পালানোর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

 

এদিকে ২৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকারিয়া কাদির জানিয়েছেন, তাদের আওতাধীন সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে। প্রতিটি সদস্যকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং হামলাকারীদের আটক নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক প্রধান সন্দেহভাজনকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেওয়া এই ঘোষণা অপরাধ দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানকেই স্পষ্ট করে।

এই ঘটনায় বিজিবির সক্রিয় ও কঠোর ভূমিকা আবারও প্রমাণ করে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় সীমান্তে কোনো ধরনের আপসের সুযোগ নেই। সীমান্তের প্রতিটি ইঞ্চি পাহারা দিয়ে অপরাধীদের পালানোর পথ রুদ্ধ করার এই প্রচেষ্টা সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ তৈরি

শেষ পর্যন্ত এই সংকটময় সময়ে বিজিবির দৃঢ় অবস্থান শবাসীকে এই বার্তাই দেয়, ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সবসময় সজাগ, আর অপরাধ করে কেউই আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।

Related Posts

en_GB