মইনুল আবেদীন খান, বরগুনা জেলা প্রতিনিধিঃ
সরকারি ভাড়া পরিশোধ না করায় তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বরগুনা জেলা কার্যালয়। ১৬ বছরের বকেয়া টাকা আদায় করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসন। যথাসময়ে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করলে কার্যালয় বিহীন হয়ে পড়বে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ। এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া না দেয়ার তথ্য জেনে হতবাক স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা শহরের ফার্মেসী পট্টিতে বরগুনা সদর উপজেলা প্রশাসনের ১৬টি প্লট বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে মাসিক ভাড়া চুক্তিতে ভাড়া দেয়া হয়। এর মধ্যে ৫৫২ বর্গফুট জায়গায় একটি দোতলা টিনের ঘর তৈরি করে দীর্ঘ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ জন্য ইজারার শর্ত হিসেবে সবশেষ ২০২১ সালের ১ জুলাই বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ভাড়া ১ হাজার ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করে চিঠি দেয় উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু ১৬ বছর ধরে ভাড়ার টাকা কোন টাকাই পরিশোধ করেনি দলটি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর (রবিবার) বিকালে বকেয়া ভাড়া আদায় করার জন্য আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়টি তালাবদ্ধ করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৫৫২ স্কয়ার ফিট আয়তনের জমিতে ঘর উত্তোলন করে দীর্ঘ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রতি দুই বছর পর পর ২০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের পর থেকে এ ঘরের ভাড়া আর পরিশোধ করা হয়নি। সে হিসেবে বকেয়া ভাড়ার পরিমাণ আড়াই লাখ টাকার বেশি। বকেয়া ভাড়া আদায়ের জন্যই নোটিশ টানিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ঘরটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করলে চুক্তি বাতিলের কথাও বলা হয়েছে নোটিশে।
সূত্র আরও জানায়, বন্দোবস্তে জমিগুলো আবাসিক ও ব্যবসায়ীক ভাবে ব্যবহার করার কথা থাকলেও। এটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাই নোটিশে ঘরগুলো শুধুমাত্র বানিজ্যিক ও ব্যবসায়ীক কাজে ব্যবহার করার জন্যে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বরগুনা জেলা আওয়ামি লীগে সব পদে রদবদল হলেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামলীগ সভাপতি সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির দল পরিচালনা করে আসছেন। তারাই আয় ব্যয় হিসেব রাখতেন। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু তিনিও দলের খবর রাখেননি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভাড়া বকেয়া থাকায় কার্যালয়ে তালাবদ্ধ নোটিশ টাঙ্গানোয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উদাসীনতাকে দুষছেন নেতা-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, দল এত বছর টানা ক্ষমতায় থাকাকালে শীর্ষ নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। দলীয় কার্যালয়ে নজর দিতে সময় পাননি তাঁরা। বর্তমান বরগুনা জেলা আওয়ামি লীগের ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মধ্যে সাধারণ সম্পাদক জেলে আছেন, পৃথক হত্যা মামলায় পলাতক আছেন বর্তমান সভাপতি সাবেক সাংসদ এড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং যুগ্ন-সম্পাদক ও সদ্য সাবেক সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বরগুনা বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক যুবদল সভাপতি তালিমুল ইসলাম পলাশ বলেন, আওয়ামী লীগ এতদিন রাষ্ট্রীয় সকল সম্পত্তি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে মনে করতেন। বরগুনায় জেলা আওয়ামিলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদেরর পুকুর দখল করে নিজের বাংলো বাড়ি বানিয়েছেন। এছাড়াও জেলা আওয়ামি লীগের শীর্ষ নেতারা টেন্ডারবাজী থেকে শুরু করে এমন কোন জায়গায় নেই যেখানে দখলবাজি করেননি। সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি দখল করে তারা ভাড়া দেবে না এতে আর অবাক হবার কি আছে। এতদিনে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম মিঞা বলেন, বরগুনা বাজারে উপজেলা প্রশাসনের ১৬ টি জমি ভাড়া দেয়া আছে। প্রতি বছর জুলাইতে ২০ শতাংশ হারে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। জুলাই আগস্টে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ভাড়া আদায় করতে না পেরে গত ২৯ সেপ্টেম্বর বরাদ্ধ পাওয়া যে সকল জমির ভাড়া বকেয়া রয়েছে তাদের নোটিশ করেছি। এর মধ্যে দেখলাম বরগুনা জেলা আওয়ামি লীগের নামে বরাদ্ধ দেয়া জমির ১৬ বছরের ভাড়া বকেয়া রয়েছে। বরগুনা জেলা আওয়ামি লীগ কার্যালয় বন্ধ থাকায় ও দায়িত্বশীল কাউকে না পাওয়ায় বিধি অনুযায়ী কার্যালয়ের গেটে একটি নোটিশ লাগিয়ে ঘরটি আমরা তালাবদ্ধ করে দিয়ে আসেছি। যদি তাদের দায়িত্বশীল কেউ ভাড়া পরিশোধ করে তবে বিধি অনুযায়ী আমরা নোটিশ সরিয়ে তাদের বুঝিয়ে দিবো।