২১০ বিলিয়ন ইউরোর রুশ সম্পদ জব্দ করবে ইইউ

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হিসেবে আগে থেকেই নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থ ব্যবস্থা দুর্বল করতেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এবার ইইউ ইউরোপে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর (২৪৬ বিলিয়ন ডলার) সমপরিমাণ সম্পদ জব্দ করতে যাচ্ছে। ইইউ শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। জব্দ অর্থ ইউক্রেনকে ঋণ হিসেবে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইইউর। গতকাল শুক্রবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য বলা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ‘তারা ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে আবারও মামলা করবে। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করা ইইউর জন্য অবৈধ।’ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে এর আগেও মস্কো ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ইউরোক্লিয়ার হলো আন্তর্জাতিক সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদ সংরক্ষণ ও আর্থিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে থাকে।

তবে ইইউর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে হাঙ্গেরি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, এই পদক্ষেপ ইইউর অপূরণীয় ক্ষতি করবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেও তারা ইউক্রেনের ছোড়া ৯০টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। রাশিয়ার আকাশসীমা ও কৃষ্ণসাগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গভীর রাতে হামলা করে ইউক্রেন। মস্কো থেকে ১৮১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত তেভের শহরে ওই হামলায় অন্তত সাতজন আহত হন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, “দনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের সেনা প্রত্যাহার চায় যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন কিয়েভের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় একটি ‘মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গঠন করতে চায়।” এর আগে যুক্তরাষ্ট্র জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলো ছেড়ে দেওয়া উচিত। শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিয়ে ওয়াশিংটন কিয়েভের ওপর চাপও সৃষ্টি করছে।

এদিকে ইউক্রেনকে বেদনাদায়ক আপস মেনে নিতে হতে পারে বলে ইউরোপের দেশগুলোও শঙ্কা প্রকাশ করেছে।  কারণ ইউক্রেন এবার যুদ্ধের চতুর্থ শীতে প্রবেশ করছে। সামনে দিনগুলোতে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়বে দেশটি। তাছাড়া জ্বালানি অবকাঠামোতে বারবার রাশিয়ার হামলার ফলে বিশাল বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলেনস্কি রাশিয়াবিরোধী ৩০ নেতার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেছেন। এতে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেছেন, জনগণ গ্রহণ করবে না– এমন কোনো শাক্তিচুক্তি মেনে নেওয়া ঠিক হবে না।

ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে: ট্রাম্প
ইউক্রেনের সংঘাত অব্যাহত থাকলে তা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতে পারে বলে সতর্কতা দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমি এই যুদ্ধ বন্ধ দেখতে চাই। আমরা এ নিয়ে কঠোর পরিশ্রমও করেছি। তবে এই যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যতদিন না চলে গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে। হোয়াইট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

ইউরোপে নতুন যুদ্ধ শুরুর শঙ্কা ন্যাটোপ্রধানের 
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বৃহস্পতিবার বলেছেন, যদি পুতিন ইউক্রেনে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন, তাহলে ইউরোপে নতুন যুদ্ধের সম্ভাবনা আরও বাস্তব হয়ে উঠবে। তিনি সতর্ক করেন, রাশিয়ার হুমকির কারণে ইউরোপের দেশগুলো এতদিন চুপ থেকেছে। রাশিয়াকে না থামালে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পুতিন একটি নতুন যুদ্ধ শুরু করতে পারেন। তিনি সব ইউরোপীয় দেশকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেকেই বিশ্বাস করেন এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

Related Posts

en_GB