অভিশংসন এড়ালেও গদি টেকাতে পারবেন কী প্রেসিডেন্ট ইউন?

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সংসদে অভিশংসনের মুখোমুখি হলেও তার বিরুদ্ধে ভোট দেননি পর্যাপ্ত সংখ্যক এমপি। এর ফলে এবারের মতো অভিশংসন থেকে রক্ষা পেলেন আলোচিত এই প্রেসিডেন্ট।

শনিবার দেশটির সংসদে অভিশংসনের পক্ষে মোট ১৯৫টি ভোট পড়ে। যা প্রয়োজনীয় ২০০ ভোটের চেয়ে পাঁচ ভোট কম। এর ফলে অভিশংসন প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়।

মূলত ইউনের দল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) এমপিরাই ভোট বর্জন করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এ নিয়ে সংসদের স্পিকার উ উন-শিক বলেছেন, গোটা জাতি এবং বিশ্ব আজকের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ করছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, পর্যাপ্ত আইনপ্রণেতা এতে অংশ নেননি।

এর আগে ইউন গত মঙ্গলবার তার দেশের সেনাবাহিনীকে জরুরি ক্ষমতা দিয়ে একটি অপ্রত্যাশিত মার্শাল ল ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ‘উত্তর কোরিয়ান কমিউনিস্ট বাহিনী’ এবং ‘প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদদের’ দমনের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেন।

তবে, মার্শাল ল ঘোষণার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই সংসদের সর্বসম্মত বিরোধিতার মুখে তিনি তার আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

তার এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ কোরিয়াকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে।

দেশটির প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রেসিডেন্টের এহেন পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ইউনের বিরুদ্ধে অভিশংসন চেষ্টার ঘোষণা দেয়।

এদিকে ইউনের ওই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মহলেও নিন্দিত হয়েছে। এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন তার দক্ষিণ কোরিয়া সফর বাতিল করেছেন।

এ অবস্থায় ইউনের দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই সংকট সমাধানে আরও ‘গঠনমূলক এবং দায়িত্বশীল’ উপায় খুঁজে বের করবে।

শনিবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় ইউন তার ভবিষ্যৎ নিজ দলের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং পুনরায় মার্শাল ল প্রয়োগ না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

তবে ইউনের দল পিপিপি-র শীর্ষ নেতা হান ডং-হুন সমালোচনা করে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইউন দায়িত্ব পালনে আর সক্ষম নন এবং তার পদত্যাগ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যদিও দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য ইউনকে রক্ষায় একত্রিত হয়েছে, যা তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করেছে।

এদিকে সিউলের রাস্তায় হাজারো মানুষ মোমবাতি মিছিলের মাধ্যমে ইউনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। একজন প্রতিবাদকারী বলেছেন, ‘আমাদের কথা মানতে বাধ্য করতে হবে’।

মূলত ইউনের বিতর্কিত পদক্ষেপ দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিতে বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

এ পরিস্থিতে ইউন পদত্যাগ করলে সংবিধান অনুযায়ী দেশটিতে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হাই এর অভিশংসন এবং পদত্যাগের ঘটনায় পিপিপির পতন এবং লিবারেলদের বিজয় দেখা যায়। সূত্র: রয়টার্স

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BD