বন্যায় ময়মনসিংহে পানিবন্দি ৩৩ হাজার পরিবার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এখনো ৩৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এসব বন্যা কবলিত এলাকায় খাবার সংকটে থাকা পরিবারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।

সোমবার দুপুরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ তথ্য। এছাড়াও সৃষ্ট বন্যাকবলিত ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলা পরিদর্শন করেতে এসে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দুর্গম এলাকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

গতকাল দুপুরে উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের রাউতি ও বতিহালা গ্রামে এই ত্রাণ বিতরণ করেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল লেনিনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদুল আহমেদ জানান, বন্যা দুর্গত উপজেলার গতকাল সোমবার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ইতোমধ্যে ভূবনকূড়া, জুবলী, কৈচাপুর, সদর, গাজীরভিটা ও পৌর এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ধারা, ধূরাইল, নড়াইল, সাখুয়াই, আমতৈল ও বিলডোরাসহ অপর ছয়টি ইউনিয়নে। এতে ওইসব এলাকায় বতর্মানে ১৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে গামারীতলা, ঘোঁষগাঁও এবং দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নে কমেছে বন্যার পানি। তবে সদর, গোয়াতলা, পোড়াকানদালিয়া ও বাগবেড়সহ চার ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি থাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্দী রয়েছে।

এছাড়াও নতুন করে ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে আসায় বর্তমানে ফুলপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ৫ হাজার একশ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭ হাজারের মতো।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, বন্যা দুর্গত এলাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজের পাশাপাশি দুর্গতদের মাঝে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে ৬৩ মেট্রিক টন চাল, ৭ লাখ নগদ টাকা এবং দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

অপরদিকে বন্যার কারণে মৎস্য খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ৭ হাজার ৮০ জন মৎস্যচাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১৭ লাখ, ভেসে গেছে ৫ হাজার ৬২৪ লাখ টাকার মাছ ও ১৪৯ লাখ টাকার রেনু পোনা।

এদিকে জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, জেলার তিনটি উপজেলার মধ্যে ধোবাউড়া উপজেলায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। হালুয়াঘাটে তলিয়ে গেছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান এবং ৭৫ হেক্টর সবজি ফসল। একই অবস্থা ফুলপুরেও। এই উপজেলায় ৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর ধান এবং ৬২ হেক্টর সবজি ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BD